৯১ দিন এক অসহনীয় যন্ত্রণা আর ক্ষোভের আগুন বুকে নিয়ে অবিচারের প্রতিশোধ নেয়ার অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন একাত্ম হওয়া বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে আইসিসির চেয়ারম্যান ভারতের শ্রীনিবাশনের সহযোগিতায় আম্পায়ারদের সমর্থন নিয়ে বাংলাদেশকে অন্যায়ভাবে হারিয়েছিল ভারত। ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯ মার্চ। সেই ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছিল সারা বাংলাদেশ। মানুষের চোখের পানিতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল ৫৫ হাজার বর্গমাইলের দেশটির। সেদিন থেকেই ভারতীয় ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে একাত্ম হয়ে যান বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ। ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যেমন বাংলাদেশের মানুষ সব ভেদাভেদ ভুলে স্বাধীনতার জন্য সবাই মিলে একাত্ম হয়েছিলেন, ঠিক তেমনি স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর দ্বিতীয়বারের মতো এই ক্রিকেট ইস্যুতে আবারো বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ একাত্ম হয়ে শুধু অপেক্ষায় ছিলেন ভারতকে হারিয়ে বিশ্বকাপের ঐ ম্যাচের প্রতিশোধ নেবার নেশায়। অবশেষে ৯১ দিনের মাথায় স্বপ্নপূরণ হল বাংলাদেশের মানুষের। মেলবোর্ন অবিচারের সমূচিত জবাব পেয়েছে ভারত। সিরিজের প্রথম ম্যাচেই টাইগারদের কাছে কুপোকাত তারা। জয়ের নয়, প্রতিশোধ নেয়ার আনন্দের জোয়ারেই এখন ভাসছে সারা বাংলাদেশ। এই ম্যাচে জয়ের আনন্দের চেয়েও অনেক বেশি প্রাপ্তি ছিল প্রতিশোধের মাধ্যমে ৯১ দিন বুকে লালন করা বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের মনের ক্ষোভের আগুন প্রশমিত হওয়া। আর দ্বিতীয় ম্যাচেও ভারতকে একেবারে সহজেই উড়িয়ে দিয়ে সিরিজ জিতে টাইগাররা শুধু ভারতকেই নয় পুরো ক্রিকেট বিশ্বকেই জানিয়ে দিলো, বাংলাদেশকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে দেখাটাই যে এখন ক্রিকেট ব্যাকরণের সবচেয়ে বড় ভুল। ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের এই সিরিজ জয়ে আনন্দে আত্মহারা বাংলাদেশের মানুষ। এর আগে বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ে এবং পাকিস্তান দলকে হোয়াইট ওয়াশ করলেও ঐ দুটি দলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের আগুন ছিল না বাংলাদেশের দর্শকদের মনে। সবাই অপেক্ষায় ছিলেন শুধু ভারতকে ধরাশায়ী করার প্রত্যাশায়। পবিত্র রমজান মাস থাকায় ইবাদত বন্দেগিতে ব্যস্ত থাকার কারণে বাংলাদেশের মানুষ রাস্তায় নেমে স্বভাবসুলভ উল্লাস প্রকাশ করতে না পারলেও ঘরে ঘরে চলছে আনন্দের বন্যা। ঘরে বাইরে অফিস আদালতে সর্বত্রই একই আলোচনা বাংলাদেশের ভারত জয়। খেলা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই দর্শকরা খ- খ- আনন্দ মিছিল বের করে স্টেডিয়াম এলাকা প্রদক্ষিণ করে। দর্শকরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্টেডিয়াম প্রদক্ষিণ করেছেন শুধু এক এবং অভিন্ন আওয়াজে ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরের রাতের আঁধারও আলোকিত হয়ে যায় উৎসবের আনন্দে। ঢাকার বাইরেও সারা দেশে চলে আনন্দ-উল্লাস। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষকে এক হয়ে অতীতে আর কখনোই এভাবে আনন্দ-উল্লাস করতে দেখা যায়নি। বাংলাদেশের দর্শকদের মনে যে ভারত সম্পর্কে কতটা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে তার প্রমাণ মেলে বাংলাদেশের ক্ষুদে দর্শক অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের টেন গ্রেডের ছাত্র লাবিব জোহায়ের হোসেনের মন্তব্যে। স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে এসে লাবিব মন্তব্য করে, ‘ভবিষ্যতে যতবারই বাংলাদেশ-ভারত ক্রিকেট ম্যাচ হবে, তাতে যদি ভারত আম্পায়ারদেরকে ম্যানেজ করতে না পারে তাহলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের জয়লাভ করাটা খুবই কঠিন হবে।’ উল্লেখ্য, লাবিব বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের দিন মেলবোর্নের মাঠে উপস্থিত ছিল। বাংলাদেশের এই জয়ে দারুণভাবে উল্লসিত দেশের সাবেক ক্রিকেটাররাও। বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক ও দেশের শীর্ষ ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ রকিবুল হাসান ইনকিলাবকে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘ক্রিকেটে বাংলাদেশ এখন এক নতুন বাংলাদেশ। ভারতের মতো শক্তিশালী দলকে এভাবে পর পর দুই ম্যাচে হারিয়ে বাংলাদেশ প্রমাণ করলো ক্রিকেটে আমরা যে এখন অনেক বেশি উচ্চতায়। আমি আরও বেশি আনন্দিত এই সিরিজের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি এক বিস্ময়কর আবিষ্কার মোস্তাফিজকে। এরকম বা হাতি পেস বোলারদের বড়ই অভাব ক্রিকেট বিশ্বে। মোস্তাফিজের আগে আমি সর্বশেষ এই মানের বা হাতি পেস বোলার দেখেছিলাম পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমিরকে।’ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে অন্যায়ভাবে হারিয়ে দেয়া এবং বাংলাদেশের ক্রিকেটকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে দেখার কারণে ভারতের প্রতি বাংলাদেশের দর্শকদের ক্ষোভের কোন অন্ত ছিল না। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের দর্শকদের মনে একটি প্রশ্ন বেশ বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল যে ভারত কি মনে করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে? কোন বিষয়েই কখনো কাউকে অবজ্ঞা করা উচিত নয়। আর যদি নেহায়েত কাউকে কখনো অবজ্ঞা করতেই হয় তাহলে অবশ্যই সেটা করতে হবে কেবল দুর্বলকেই এবং কোনভাবেই সেটা সবলকে নয়। কিন্তু বিপুল অর্থ খ্যাতি আর আইসিসির সরাসরি প্রভাব ঘটানোর অথরিটি পেয়ে দম্ভ আর অহংকারে বাস্তব সত্যটি ভুলেই বসেছিল ভারতীয় ক্রিকেট দল। যে কারণে বিশ্বকাপে আম্পায়ারদের সাথে নিয়ে আইসিসির চেয়ারম্যান শ্রীনিবাসনের সরাসরি হস্তক্ষেপে ভারত জোর করে বাংলাদেশকে হারিয়ে বিশ্বব্যাপী নিন্দিত হলেও থেমে থাকেনি ভারতীয় ক্রিকেট দলের অহংকার আর অহমিকা। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে কোনরকম গুরুত্ব আর পাত্তাই দিচ্ছিল না ভারতীয়রা। ভারতের কয়েকজন তারকা ক্রিকেটারের কথাবার্তা আর আচরণে এমন একটা ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছিল যেন বাংলাদেশের সাথে ক্রিকেট খেলাটাই তাদের জন্য অসম্মানের ব্যাপার। তাইতো কিছুদিন আগে আইপিএল শেষ হওয়ার পর ভারতের তারকা ক্রিকেটার অধিনায়ক ধোনি, বিরাত কোহলী ও সুরেশ রায়না বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দলে তাদের প্রয়োজন নেই ভেবে কিছুদিন বিশ্রামের জন্য ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কাছে আবেদন করেছিলেন। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডও খেলোয়াড়দের কথায় বাংলাদেশ দলকে সম্পূর্ণরুপে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে তাদের দ্বিতীয় দলকেই বাংলাদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ যখন ঢাকার মাটিতে পাকিস্তান দলকে হোয়াইট ওয়াশ করে তখন ভারতীয় দলের টনক নড়ে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের পাশাপাশি নড়েচরে বসে ধোনি, কোহলী ও রায়নার মতন দলের সেরা খেলোয়াড়রা। বাংলাদেশকে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখার মনোভাব থেকে সরে এসে পূর্ণাঙ্গ শক্তিশালী দল ঢাকায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি তাদের। তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য অবজ্ঞা আর অবিচারের সমূচিত জবাব দিয়েছে ভারতকে ব্যাটে বলে অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়ে বাংলাদেশের তেজী খেলোয়াড়রা। এক মোস্তাফিজই জীবনের প্রথম খেলতে নেমে ভারতকে যে শিক্ষা দিয়েছেন তাতে একটি বিষয় নিশ্চিত হয়েছে যে যতদিন পৃথিবীতে ক্রিকেট থাকবে ততদিন ভারত আর কোনদিন বাংলাদেশকে অবজ্ঞা করার ধৃষ্টতা দেখাবে না। আর এটাই হচ্ছে এবারের বাংলাদেশ-ভারত ক্রিকেট সিরিজে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
-

মেইন মেনু
ফটো গ্যালারি
এন্টারটেইনমেন্ট
-
বাংলা সাপ্তাহিক
Life on line website for Bangladesh Comunity in Japan
জাপানে বাংলাদেশী সংগঠন
Halal Food List
বাংলা দৈনিক
ওয়েব পোর্টাল
-
News Calender
Visitors Counter




















