বাংলাওয়াশের আবহ মিরপুরে

প্রায় এক সঙ্গে দু’দল এসেছে শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে, পাশাপাশি করেছে অনুশীলন। তবে বাংলাদেশ দলের অনুশীলনে খেলোয়াড়রা যতোটা প্রাণবন্ত, বিপরীতে উৎকণ্ঠায় ভারত শিবির! এক বছর আগে সেরা ৭ জনকে রেখে বাংলাদেশ সফরে দল পাঠিয়ে ২-০তে জয়ে হাসতে হাসতে যারা ফিরেছে দেশে, এক বছর পর দৃশ্যপটে পরিবর্তন! পুঁচকে এক বোলারে (মুস্তাফিজুর) ছিন্নভিন্ন ভারত এখন ০-২-এ পিছিয়ে বাংলাওয়াশ আতঙ্কে আতঙ্কিত!  জিম্বাবুয়েকে ৫-০ তে ওয়ানডে সিরিজ হারিয়ে অন্য এক বাংলাদেশের আবির্ভাবের জানান দিয়ে হোমে দুর্বার হয়ে উঠেছে। সিরিজ জয়েও তৃপ্ত নয় হাতুরুসিংহের শিষ্যরা।  পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়হীন ১৬ বছর কাটানোর জ্বালা জুড়াতে ওই প্রতিপক্ষকে ৩-০তে বাংলাওয়াশ কাব্য রচনা করে ভারতের বিপক্ষে ইতিহাসের প্রথম সিরিজ জয়কে বাংলাওয়াশে রূপ দিয়েই উৎসবের প্রত্যয় মাশরাফিদের। তা হলে প্রতিপক্ষের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক অনন্য রেকর্ডটাও যে হয়ে যাবে বাংলাদেশের। ১৮তম সিরিজ জয়কে একাদশতম বাংলাওয়াশে পরিণত করার সে আবহই এখন মিরপুরে। যা ভারতকে ১৯তম হোয়াইট ওয়াশের সামনে রেখেছে দাঁড়িয়ে! এই মিরপুর দিয়েছে বাংলাদেশকে অনেক কিছু।  ভেন্যুর অভিষেক সিরিজে স্কটল্যান্ডকে হোয়াইট ওয়াশ দিয়ে শুরু, ২০১০-এ নিউজিল্যান্ড, ২০১৩ তে পাকিস্তানের পর ভারতের বিপক্ষেও আর একটি হোয়াইট ওয়াশের ইতিহাস রচনার হাতছানি। বাংলাওয়াশের হ্যাটট্রিক পূরণে তাই সংকল্পবদ্ধ এখন বাংলাদেশ দল। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে সে প্রত্যয়ী কণ্ঠ নাসিরের মুখেÑ ‘উপর্যুপরি সিরিজ পাকিস্তান সিরিজ আমাদের অনেক আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। ওইটা ভারতের বিপক্ষে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। আমরা  যে যেমন, সে যদি সেভাবে খেলতে পারি, তবে আশা করি ভারতকে হারাতে পারবো।’ ২-০তে এগিয়ে থেকে শেষটা ও একই ভাবে করতে কতোটা প্রত্যয়ী, ড্রেসিংরুমের সে বার্তাই মিডিয়াকে জানিয়েছেন নাসিরÑ ‘ড্রেসিংরুমে  কথা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে আমরা যদি ২টি ম্যাচ হারতাম তাহলে আমাদের কেমন প্রেসার থাকতো, কীভাবে সিরিজের শেষ ম্যাচটি খেলতাম আমরা। অবশ্যই যেনো সেভাবে জেতার জন্যই খেলি। সবাই যেন সিরিয়াস থাকে। বিন্দু পরিমাণও ছাড় দেয়া যাবে না।’ সব হারিয়ে শেষ ম্যাচে ভারত সান্ত¦না নিয়ে দেশে ফিরতে মরিয়া হয়ে খেলবে, তা বোঝানোর প্রয়োজন নেই বাংলাদেশ দলকে। মেলবোর্ন অবিচারের জবাব দিতে ভারতের উপর ক্রিকেটিং আক্রোশ এতোটাই চালিয়েছে, ইতিবাচক এবং আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের সে তত্ত্ব উপস্থাপনের আর একটি ক্ষেত্র আজ। এমনটাই জানিয়েছেন র‌্যাংকিংয়ে ৮৮ থেকে ৯৩ পয়েন্টে উঠে, ৭ নম্বর পাকাপোক্ত করা বাংলাদেশ দল। নাসির সেই প্রত্যয়ের কথাই শুনিয়েছেনÑ ‘ভারত আমাদের উপর তাদের সর্বোচ্চ আক্রমণ করতে হয় এটা আমরা জানি। কে কি পরিকল্পনা করে আমাদের উপর আক্রমণ করলো এটা দেখার বিষয় নয়। আমরা কি করছি সেটাই আমাদের কাছে অনেক বড় ব্যাপার। প্রত্যেকটা ক্রিকেটারেরই আলাদা আলাদা রোল আছে আমরা নিজেদের রোলটুকু মাঠে প্রয়োগ করার চেষ্টা করব। দলের চিন্তা-ভাবনা আসলে তেমন কিছু না। চেষ্টা থাকবে ম্যাচটি জেতার। আমরা জেতার জন্যই খেলবো এটাই সবচেয়ে বড় কথা।’ দ্বিপাক্ষিক সিরিজে গত বছর নিউজিল্যান্ডের কাছে ০-৪ এ হারের পর হোচট খেতে হয়নি ভারতকে। তারাই কি না বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪র্থ সিরিজে হোয়াইটওয়াশের মুখোমুখি। বাংলাদেশের এক একটি হোয়াইটওয়াশ এখন মিডিয়ায় বাংলাওয়াশে সম্বোধন পাচ্ছে, তা জেনে গেছেন ভারত স্পিনার অশ্বিন। এমন একটি লজ্জাষ্কর পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে তাদের লক্ষ্য একটাই, হোয়াইটওয়াশ এড়ানো। অশ্বিন এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাননিÑ ‘তারা আমাদের হারিয়েছে, এখন আমরা ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের বিধ্বস্ত করব, এমন কিছু মাথায় নিয়ে খেলা ঠিক হবে না। আশা করছি  বাংলাওয়াশ এড়াতে পারব।’