পবিত্র ওমরা পালনে যাচ্ছেন ২০ দলীয় জোটনেত্রী গণঅভ্যুত্থানেই বিদায় নেবে স্বৈরাচার : খালেদা জিয়া

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানেই স্বৈরাচার বিদায় হবে। দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। দেশে শান্তি ও সম্মান ফিরে আসবে। গতকাল এক ইফতার মাহফিলে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, দেশে আজ গণতন্ত্র নির্বাসিত। আইনের শাসন অনুপস্থিত। মানবাধিকার পদে পদে লঙ্ঘিত হচ্ছে। মানুষের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই। মানুষ আজ প্রতিনিয়ত গুম-খুন-হত্যা-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এ জন্য দায়ী বর্তমান জবর দখলকারী এই সরকার। তারা (সরকার) কোনো কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। তাদের নিয়ন্ত্রণে কোনো কিছু নেই।সকল অপকর্মের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের এমপি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা জড়িত অভিযোগ করে তিনি বলেন, সকল পেশার মানুষ ও দেশবাসীর কাছে একটাই আমাদের আহবান থাকবে, আসুন এই রমজান মাসে প্রতিটি নামাজে আল্লাহর কাছে দোয়া করব, ফরিয়াদ করব যাতে তিনি (আল্লাহতালা) এই জালেমদের দ্রুত বিদায় করেন। ইস্কাটন গার্ডেনের লেডিস ক্লাব মিলনায়তনে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন-ড্যাব এর উদ্যোগে এই ইফতার মাহফিল হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন বেগম খালেদা জিয়া। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা-স্যার সলিমুল্লাহ-ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম-বগুড়াসহ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক, চিকিৎসক এবং তিন হাজার চিকিৎসক অংশ নেন।যানজটের কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন ইফতারের শুরুর মিনিট খানেক পর অনুষ্ঠানস্থলে আসেন। এর পরপরই অনুষ্ঠানে প্রবেশ করেন সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা  চৌধুরী। ইফতার শেষে বেগম জিয়া চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। প্রবীণ চিকিৎসক বি. চৌধুরী, অধ্যাপক এমএ মাজেদ, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার, নজরুল ইসলাম খান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির খন্দকার মাহবুব হোসেন, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের রুহুল আমিন গাজী, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের শওকত মাহমুদ, ড্যাব এর সভাপতি অধ্যাপক একেএম আজিজুল হক ও মহাসচিব অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেনকে নিয়ে এক টেবিলে বসে ইফতার করেন বিএনপি  চেয়ারপারসন। এছাড়া শিক্ষাবিদ অধ্যাপক বায়েস ভুঁইয়া, অধ্যাপক আবু আহমেদ, অধ্যাপক সদরুল আমিন, ইউনিভার্সিটি টিচার অ্যাসোসিয়েশনের অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের জাকির হোসেন, সাংবাদিক নেতা এম আজিজ, আব্দুুল হাই শিকদার, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, আসাদুর রহমান আসাদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান প্রমুখ ইফতারে উপস্থিত ছিলেন।দখলবাজ ও চাঁদাবাজির জন্য ক্ষমতাসীনদের অভিযুক্ত করে খালেদা জিয়া বলেন, সরকারের এমপি ও তার পরিবার এমনকি ছাত্রলীগ-যুবলীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা মানুষের বাড়ি-ঘর, জমি-জমা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করছে। তাদের চাঁদাবাজির অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। সাধারণ মানুষ আজ কীভাবে রোজা রাখে সেদিকে অবৈধ সরকারের কোনো নজর নেই। তারা বড় বড় মিথ্যা বুলি আওড়ায়। আর বড় বড় প্রকল্পের নামে সব টাকা কমিশন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। প্রশাসন ও বিচারবিভাগে দলীয়করণের অভিযোগও করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।তিনি বলেন, ভালো ভালো চিকিৎসক যারা জাতীয়তাবাদী দলের সমর্থক তাদের চাকরি থাকে না। বিচার বিভাগ দলীয়করণ করা হয়েছে। সেখানেও বিচারক পদে দলীয় লোকজন বসানো হয়েছে। ফলে বিচারকরা সাধারণ মানুষকে ন্যায় বিচার দিতে পারছেন না। মানুষ সুবিচার পাচ্ছে না। সরকারি দলের লোকজন খুন-খারাবি যাই করুক কেনো, তাদের কোনো বিচার নেই, তাদের ধরা হয় না, শাস্তি হয় না।পুলিশ বাহিনীর দলীয়করণের কথা বলতে গিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু কিছু পুলিশ সদস্য আছেন যারা চরম অত্যাচার ও দুর্নীতির সঙ্গে লিপ্ত হয়ে পড়েছেন। আজকে পুলিশ মানুষ গুম করে তাদের কাছেই টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে তাদেরকে হয় ক্রসফায়ারে দেবে, না হলে জেলে নিয়ে যাবে। এ হচ্ছে পুলিশের অবস্থা। আজ পুলিশ আর সেবক নয়। তাদের হাত অনেক লম্বা হয়েছে। আগে আমরা শুনতাম, আইনের হাত অনেক লম্বা। কিন্তু এখন পুলিশের হাত অনেক বেশি লম্বা হয়েছে। কারণ তারা এই সরকারকে টিকিয়ে রেখেছে।খালেদা জিয়া বলেন, আমরা দেশে সুশাসন ও আইনের শাসন চাই। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। মেয়েরা যাতে নির্ভয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারে, সকল জনগণের নিরাপত্তা বিধান করতে চাই। ইনশাআল্লাহ আমরা তা পারব।ইফতার শুরুর আগে অনুষ্ঠানস্থলে টেবিলে টেবিলে গিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন খালেদা জিয়া।ইফতারে ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, রুহুল আলম চৌধুরী, আব্দুুল হালিম, আহমেদ আজম খান, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, আসাদুজ্জামান রিপন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবীর খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, আনহ আখতার হোসেন, আবদুস সালাম আজাদ, ডা. সালাউদ্দিন মোল্লা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।পবিত্র ওমরা পালনে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া প্রতি বছরের মতো এবারেও পবিত্র ওমরাহ পালন করতে ১৯ অথবা ২০ রমজানে সউদী আরব যাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। প্রায় একই সময়ে লন্ডন থেকে বড় ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্ত্রী-কন্যাসহ বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ওমরাহ পালনে শরিক হবেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেসউইং সূত্র জানায়, ২০ রমজানের মধ্যেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পবিত্র ওমরা পালনের জন্য ঢাকা ছাড়বেন। সউদী আরবে অবস্থানকালে তিনি ওমরাহ পালন এবং মদিনায় মহানবী (সা.) রওজা মোবারক জিয়ারত করবেন। ২৮ রমজান পর্যন্ত তার সেখানে অবস্থান করার কথা রয়েছে। জানা গেছে, খালেদা জিয়ার সউদী সফরে দলীয় কোনো নেতা সফরসঙ্গী হিসেবে থাকছেন না। তবে ব্যক্তিগত স্টাফ ও পরিবারের কয়েকজন সদস্য তার সফরসঙ্গী হবেন। বিগত সময়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ওমরা পালনের জন্য সিনিয়র ও মধ্য সারির অনেক নেতা সউদী  আরব যাওয়ার প্রতিযোগিতা করলেও এবার এর সংখ্যা কম। কারণ, অনেকে আছেন কারাগারে আবার অনেকে মামলার কারণে দেশ ছাড়তে পারবেন না। এছাড়া ভিসা জটিলতাও রয়েছে।